বন্ধু একটি ছোট শব্দ, কিন্তু এর গভীরতা অনেক। ছোট এই তিন অক্ষরের শব্দে জড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীর সকল অনুভূতি, বিশ্বাস, ভালোবাসা, নির্ভরতা এবং মায়ার বন্ধন। বন্ধুত্বের এই মায়ার বন্ধন গড়ে ওঠে স্কুল জীবন থেকেই। এমারসন বলেছেন- “প্রকৃতির সর্বশ্রেষ্ঠ সৃষ্টির নাম বন্ধুত্ব।” বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে, ভার্চুয়াল জগতে বন্ধুত্বকে দেখা যায় ফেইসবুক চ্যাঁটিং এবং টুইটারে টুইট করে, যদিও এর মধ্যেই অনেকে প্রকৃত বন্ধু খুঁজে পায়। কিন্তু এছাড়াও বন্ধুত্বের আরেকটি জগৎ রয়েছে। যে জগৎটা তথ্য প্রযুক্তির এই চ্যাঁটিং বা টুইট করেই শেষ হয় না।
উইড্রো উইলসন বলেছেন- “বন্ধুত্ব একমাত্র সিমেন্ট যা সবসময় পৃথিবীকে একত্র রাখতে পারবে।” একজন ভালো বন্ধু সারা জীবনের সম্পদ। "বন্ধুত্ব" হলো হাত এবং চোখের মত। যদি হাত ব্যাথা করে চোখে জল আসে। আবার যদি চোখে জল আসে, তখন হাতটা ব্যস্ত হয়ে যায় চোখের জল মুছতে। হাতের ব্যথা আর চোখের কান্না যেমন ওতপ্রোতভাবে জড়িত, বন্ধুত্বের বন্ধনও ঠিক তেমনি। কর্মব্যস্ত জীবনে বন্ধু বিক্ষিপ্ত হলেও হৃদয় থেকে দূরে নয়।
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বলেছেন- “গোলাপ যেমন একটি বিশেষ জাতের ফুল, বন্ধু তেমনি একটি বিশেষ জাতের মানুষ।” বন্ধুত্বহীন জীবন একেবারে মূল্যহীন। সুতরাং ঘৃণা নয়, মিষ্ট হাঁসি দিয়ে বলি যদি বন্ধু হও হাতটা বাড়াও। বন্ধুত্ব হবে কোনো বিনিময় ছাড়া। যে বন্ধুত্বে বিনিময় নামের কোন নির্মমতা থাকে না সে বন্ধুত্ব হয় অনাবিল প্রশান্তির।
শেক্সপিয়র বলেছেন- “কাউকে সারা জীবন কাছে পেতে চাও? তাহলে প্রেম দিয়ে নয় বন্ধুত্ব দিয়ে আগলে রাখো। কারণ প্রেম একদিন হারিয়ে যাবে কিন্তু বন্ধুত্ব কোনোদিন হারায় না।” বন্ধুরা তোমাদের একটি কথা বলি, আমার কিন্তু একটা প্রথমা আছে, যাকে আমি প্রেমের বন্ধনে আবদ্ধ করতে চেয়েছিলাম কিন্তু আমার প্রথমা চায়নি আমাকে প্রেমের বন্ধনে জড়াতে, সে চেয়েছে শেক্সপিয়রের মত আজীবন আমাকে বন্ধুত্বের বন্ধনে জড়িয়ে রাখতে যেন হারিয়ে না যাই। বন্ধুত্বের স্মরণিকায় আমি সকল বন্ধুদের মাঝে আমার প্রথমাকে স্মরণীয় রাখতে আমার একটি কবিতা উপস্থাপন করলামঃ
আমার একটা প্রথমা আছে
❑
জীবন থেকে অনেকটা বছর ঝরে গেছে।
আস্তে আস্তে অনন্ত অসীম জীবনের দিকে
ধাবিত হচ্ছি।
জীবনের অনেকটা বছর পেরিয়ে আজ এমন একটা
জায়গায় দাঁড়িয়ে,
যেখান থেকে ইচ্ছে করলেই বলা যায় না,
"তোকে না পেলে মরে যাবো!"
বুকটা ফেটে চৌচির হয়ে গেলেও কাউকে
ডেকে বলা যায় না যে,
"আমার একটা প্রথমা আছে যার জন্য
অসম্ভব কষ্ট হচ্ছে।"
❑
জীবনের এমন একটা অন্তে অবস্থান যে,
কাউকে ডেকে বলা যায় না,
"জানেন! আমার একটা প্রথমা আছে
যার কাছে আমি তার কেউ না,
কিন্তু সে আমার সব,
আমি তার জান হতে পারিনি কিন্তু সে
আমার জান।"
❑
একটা বয়সের পর হাত কেটে রক্তাক্ত
করে কাউকে দেখানো যায় না,
কিন্তু রক্তের স্রোতধারা হৃদয়ে ঠিকি
বয়র যায়।
মানুষের সামনে কষ্টের লোনা জল ফেলা
যায় না।
কষ্ট বোধ কিন্তু একই রকম হয়।
কারণ, বয়স তো হয় শরীরের,
মনের কোন বয়স নেই, মন কখনো বয়স্ক হয়
না,
মন সারাজীবনই একই রকম কষ্ট পায়।
অবহেলার আঘাতে মনটা দুমড়ে মুচড়ে
যায়,
কষ্টের ইটভটায় পুড়ে পুড়ে মনটা ঠিকই
ঝামা হয়,
শুধু সহ্য ক্ষমতাটা বাড়ে।
❑
একটা বয়স পেরোনোর পর কারো জন্য ফুপিয়ে
কান্না করা
বা কল রিসিভ না করলে
কিংবা মেসেজ সিন না করবার কারণে ঝগড়া
করলে
লোকে বলবে, "তুই কি পাগল নাকি?"
কিন্তু সেই বয়সেও যে মানুষের মন একই
রকমই কষ্ট পায়।
একই রকম খুশী হয় প্রশংসায়,
শুধু প্রায়োরিটিটা বদলে যায়,
প্রিয় মানুষটার বদলে স্বামী কিংবা
স্ত্রী অথবা স্বামী-স্ত্রী'র বদলে সন্তান।
❑
কষ্ট যতই হোক, মনের অনুভূতি প্রকাশ
করার ক্ষেত্রটা
কমতে শুরু করে আস্তে আস্তে।
চিৎকার করে কাঁদার বদলে দরজা বন্ধ
করে কাঁদতে হয়।
কষ্ট পেয়ে হাত কেটে রক্ত ঝরানো যায়
না,
কিন্তু রক্ত ঠিকি ঝরে হৃদয়ে।
কাউকে ভালোবাসলে তাকে ডেকে কখনোই বলা
যায় না,
তোমাকে না পেলে মরে যাবো।
❑
একটা বয়সের পর হয়তো ভালোবাসতেও নেই!
আর ভালোবাসলেও সেই ভালোবাসায় পাগলামি
থাকতে নেই।
কারণ মনের কোন বয়স না থাকলেও
দেহের বয়সের সাথে সাথে বাস্তবতা বড়ই
নিষ্ঠুর আচরণ করে মানুষের সাথে।
জানি না এ নিষ্ঠুরতার অনলে আর কত পুড়বে
আমার এ পোড়া অন্তর!!!
অনেক কথা হলো, এবার বিদায়ের পালা।
আজি হেথা মিলন মেলায় বন্ধু-বান্ধব
যত,
সবার জন্য অশ্রু আমার ঝরছে অবিরত।
জানি আমি, জানে সবে, চির বিদায় নয়,
তবু কেন হৃদয় আমার পুড়ে হচ্ছে ক্ষয়?
বিষাদিত মনটাকে মোর, রেখো প্রার্থনায়,
বিদায় বন্ধু বিদায়।
সবশেষে কবীর সুমনের ভাষায় বলবো, “হাল
ছেড়ো না বন্ধু বরং কণ্ঠ ছাড়ো জোরে, দেখা হবে তোমার-আমার অন্য দিনের ভোরে।”
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
H/P-
8801712414716
+6584027281