প্রকৃতির বিচার
মোহাম্মদ সহিদুল ইসলাম
❑
প্রকৃত ভালবাসা এমন একটা জিনিস,
যে যাকে ভালবাসে সে তার প্রতি অন্ধ হয়ে যায়,
প্রিয় মানুষটি যা করে তা-ই ভাল লাগে,
প্রিয় মানুষটির ন্যায়-অন্যায় বুঝা যায় না,
নিঃশর্তভাবে তার সব কিছু ভাল লাগে।
❑
বিচিত্র দুনিয়ায় প্রকৃত ভালবাসা যেমন আছে,
ছলচাতুরী ভালবাসার সংখ্যাও কিন্তু নেহায়েত কম নয়।
যেই মানুষটি তোমাকে জীবনের সর্বস্ব উজার করে ভালবাসে,
যেই মানুষটিকে তুমি স্বপ্ন দেখালে,
যে মানুষটি তোমাকে নিয়ে আশায় বুখ বাঁধলো,
সেই মানুষটির পবিত্র সম্পর্ককে তুমি
সিম্পল বন্ধুত্বের সম্পর্কে উড়িয়ে দিলে?
তুমি কি জানো?
ভেতরে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রেখে
উপরে কতটা ভালবাসার স্বপ্ন দেখিয়েছো তাকে?
একবারও কি ভাবো নি?
স্বপ্নীল মানুষটি তার প্রিয় মানুষটিকে কতটা মায়ায় জড়িয়ে
হৃদয়ের অবিচ্ছেদ্য বন্ধনে যুক্ত করেছে?
তুমি কি অনুধাবন করেছো?
কতটা আঘাতে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছো তার হৃদয়?
❑
যে প্রকৃত ভালোবাসে সে কখনো অভিশাপ দেয়না,
কিংবা সে কখনো অভিশাপ দিতে পারে না।
কিন্তু অভিশাপ না দিলে কি হবে?
"রুহের হায়" বলে একটা কথা আছে,
ইংরেজিতে যাকে বলে "রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার"
কোরআনে “কাফফারা” র কথা বর্নিত আছে।
প্রত্যেকটা মানুষ তার কর্মের প্রতিফল পাবেই পাবে,
কেউ আগে আবার কেউবা কয়েকদিন পরে,
কিন্তু প্রতিফল তাকে ভোগ করতেই হবে।
যে কাঁদায় তাকে কাঁদতে হয়
এটা কোন অভিশাপ নয়
এটা প্রকৃতির বিচার।
❑
ময়নাতদন্ত কেন করা হয়?
কোন মানুষকে কতটা আঘাতে আঘাতে
তাকে হত্যা করা হয়েছে,
তা পরিক্ষা করার জন্যই তো ময়নাতদন্ত, তাই না?
প্রতিটা আঘাতের চিহ্নই তো হার্টে থাকে।
ডাক্তার সাহেবরা আপনারা কি দেখেন না!
ভালবাসার স্বপ্নের সলিল সমাধি রচনায়
প্রিয় মানুষটির হার্টে কতটা আঘাতে
তাকে জীবন্ত লাশ বানানো হয়েছে?
এটা কি আপনারা দেখেন না?
প্রকৃত ভালবাসার মানুষটি হয়তো
তোমাকে অভিশাপ দিচ্ছে না,
তাই বলে "রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার" বলতে কি কিছু থাকবে না?
“কাফফারা” কি তাদের দিতে হবে না?
প্রকৃতি চলে তার আপন গরিমায়,
তাইতো যে মানুষের অন্তরটাকে তুমি
ভেঙ্গেচুরে চুরমার করে দিয়েছো,
বানিয়েছো তাকে জীবন্ত লাশ,
এক বা অন্য উপায়ে তোমাকেও জীবন্ত লাশ হতে হবে,
এটা কোন অভিশাপ নয়,
এটা প্রকৃতির বিচার।
❑
প্রকৃতির বিচার হবেই,
আমরা আসলেই অনেক অদ্ভুত
কাউকে কষ্ট দিয়ে,
কাউকে কাঁদিয়ে,
কাউকে অপমান করে,
কাউকে ঠকিয়ে বেমালুম ভুলে যাই,
কিন্তু প্রকৃতি ভুলে যায়? অবশ্যই না।
প্রকৃতি কিছুই ভুলে না,
প্রকৃতি ক্ষমা করে না,
❑
আপনি মনে রাখবেন,
আপনি যার হৃদয় ক্ষতবিক্ষত করে,
ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে,
দিব্যি সুখেই দিন যাপন করছেন,
সে হয়ত প্রতিবাদ করছে না,
কিন্তু তার বোবা কান্না,
তার রক্তাক্ত হৃদয়ের নিরব আর্তনাদ তো
প্রকৃতি সহ্য করবে না।
এমন হবে যে আপনার বোবা কান্না
দেখার কেউ থাকবে না।
এটা ভুক্তভোগীর অভিশাপে নয়,
এটাই প্রকৃতির বিচার।
❑
সেক্রিফাইসিং মনের মানুষ গুলো এক কৃত্রিম বোবা।
তাদের বোবা কষ্ট আর চোখের পানিতে
যে বেনামি সাগর হয় তাতে স্বার্থান্বেষীরা আনন্দ স্নান করে,
কষ্টের চাপা যন্ত্রনায় যখন তার হৃদয়টা
পুড়ে ছাই না হয়ে অগ্নিদগ্ধ কয়লা হয়ে যায়
তখন স্বার্থান্বেষীরা আরো বাতাস করে,
উল্লাস করে।
কেউ বিশ্বাস করুক আর না করুক,
মহামহিম সৃষ্টিকর্তা একজন আছেন,
সৃষ্টিকর্তা কারোর একার না,
তিনি কাউকে ঠকান না।
❑
হাদিসে বর্নিত আছে "যার সাথে যার ভালবাসা
তার সাথেই তার হাশর।"
সুতরাং সময় থাকতে আঘাত দেয়া মানুষটির কাছে
ক্ষমা নিতে না পারা মানুষটি দূর্ভাগা,
সম্পর্কের সঠিক ব্যবহার যেমন জরুরি,
তেমনি সময় থাকতে
সুন্দর সম্পর্ক ঠিক করাও জরুরি।
কারো হৃদয় চুরমার করে দিয়ে
নিশ্চিন্তে ঘুমানো মানুষেরা,
"রিভেঞ্জ অফ ন্যাচার"
অর্থাৎ প্রকৃতির বিচারের জন্য প্রস্তুত থাকো।