লজ্জিত আওয়ামী লীগ!
২০১৮ এর সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সহজ বিজয়ের নির্বাচনে (জুজুর ভয় দেখিয়ে ও দলকে ভুল বুঝিয়ে) বিশেষ সুবিধা নিয়ে বিতর্কিতদের মনোনয়ন দানের কারিগর ছিলেন একজন উপদেষ্টা ও তার আমলাতান্ত্রিক সিন্ডিকেট। নির্বাচনকে বিতর্কিত ও দলীয় এমপিদের হেয়/কোনঠাসা করতে মাঠ পর্যায়ে তাদের অতি উৎসাহিত কর্মকান্ডে আওয়ামী লীগের গায়ে কাঁদা লাগাতে সচেষ্ট ছিলো। আওয়ামী লীগের সিনিয়র সব নেতাকে সাইড লাইনে বসিয়ে রেখে তিনি একাই খেলে যাচ্ছিলেন। প্রশাসনিক ও রাজনৈতিক সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় রাখতে সব আয়োজনই করছিলেন সেই উপদেস্টা।
২০১৪ এর সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই প্রশাসনের কেউ কেউ মাঠ পর্যায়ে অপ্রতিরোধ্য হয়ে পড়েন। সাধারণ জনগনকে উনারা মানুষ বলেই মনে করেন না। সম্মানিত এমপি-মন্ত্রী, নেতৃবৃন্দ ও জনপ্রতিনিধিসহ কাউকেই তারা পাত্তা দিতে চান না। আওয়ামী লীগের সাধারণ কর্মী সমর্থকরা তাদের কাছে নাজেহাল হতে থাকে রীতিমত। তাদের ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ ও ক্ষমতার দাপট দিনে দিনে বেড়েই চলেছে; যেন আওয়ামী লীগের মাঝা ভেঙ্গে দিতে এক জঘন্য খেলায় মেতেছেন তারা।
আওয়ামী লীগের কোন নেতা-কর্মী তাদের কাছে কোন কাজে গেলে সরকারের একমাত্র শক্তি ও রক্ষক হিসেবে তারা নানান গল্প শোনায়। "তারা ছাত্রলীগ করে নির্যাতিত, জামার নীচে কোপের দাগ এখনো আছে" -এমন মনগড়া কথা বলে দলীয় লোকদের অসহযোগিতা করে থাকেন। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের কার্যক্রম ও দায়িত্বকে তারা তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করে নিজেদেরকে সর্বদা মহাক্ষমতাধর হিসেবে জাহির করার চেষ্টা করেন৷ ছাত্রলীগ, যুবলীগ বা দলীয় পরিচয় দিলে তারা দূর্ব্যবহার ও অসহযোগিতার মাত্রা বাড়িয়ে দেন। তাদের ভাব নমুনা দেখলে মনে হয় তারাই এদেশের রাজা-মহারাজা, আর সবাই তাদের গোলাম। আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক শক্তিকে খর্ব করে আমলাতন্ত্র কায়েমই যেন তাদের কাজ। তারা বুঝতে চেষ্টা করে না, লগি বৈঠার আন্দোলনের সময় আওয়ামী লীগ তার রাজনৈতিক শক্তি দিয়েই সবকিছু মোকাবেলা করেছিলো।
উনারা নিজের পক্ষে আইন বানিয়ে সবার উপর চাপান। নিজেদের জাহির করতে জমিদারী কায়দায় প্রটোকলের বিধান তৈরী করেন। অন্যান্য ক্যাডারভূক্ত সকল কর্মকর্তাকে হেয় করে নিজেরা প্রভু সাজেন। রাষ্ট্রীয় মিটিং-সমাবেশ ও কাজে ক্যাডার সার্ভিসের অন্যদের সাথে তারা বাড়ীর চাকরের মত আচরণ করেন। সুকৌশলে নিজেদেরকে প্রাধিকারভূক্ত কর্মকর্তা সাজিয়ে প্রজাতন্ত্রের অন্যান্য ক্যাডারকে বঞ্চিত ও হেয় করে তারা সকল সুযোগ সুবিধা ও ক্ষমতা কুক্ষিগত করে নিচ্ছেন। ফলে সরকারের মহানুভবতাসহ প্রচুর সুযোগ সুবিধা দেয়ার পরেও ২/১ টি ক্যাডারের বিমাতাসুলভ, হটকারী ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণে দিনে দিনে হতাশ ও খুব্দ হচ্ছেন ক্যাডার সার্ভিসের সিংহভাগ কর্মকর্তাসহ প্রজতন্ত্রের কর্মচারিগণ। এছাড়া, ২/১ টি বাহিনীর কোন কোন জেলার কিছু কর্মকর্তার ক্ষমতার অপব্যবহারসহ বেপরোয়া কার্যক্রমে দলীয় লোকজনও আতঙ্কিত। ভালো পোস্টিং এবং যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগসহ সকল ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রেখেছেন তারা। তাদের গুটি কয়েকের কারণে বাহিনীর সারা দেশের বঞ্চিত/উপেক্ষিত/কোণঠাসা সরকার সমর্থক সদস্যরাও দিনে দিনে নাখোশ হচ্ছেন।
প্রশাসনের কারো কারো অতি বাড়াবাড়ি ও চেয়ারের দাপট অনেক ক্ষেত্রেই দলীয় নেতা কর্মী ও সাধারণ মানুষকে ক্ষুব্দ করে দিচ্ছে; নানাভাবে সরকারের গায়েও তারা কাদাঁ লাগাচ্ছেন। সাধারণ মানুষ দূরে থাক, সরকার দলীয় জনপ্রতিনিধি ও সম্মানিত সিনিয়র নেতৃবৃন্দও তাদের কাছে অনেক ক্ষেত্রেই অসহায়। দল টানা তিনবার ক্ষমতায় থাকলেও তৃণমূলের ত্যাগী নেতা কর্মীদের জন্য কোন সেক্রিফাইজ বা মূল্য তাদের কাছে নেই।
আমলাতন্ত্রের কাছে রাজনীতিবিদগণ তাচ্ছিল্যের পাত্রে পরিণত হয়েছেন, যা দলীয় শক্তিকে দিন দিন খর্ব করছে। এভাবে চলতে থাকলে আওয়ামী লীগের অস্তিত্ব হুমকীতে পড়তে বাধ্য। বরিশালের ঘটনা তারই ঈঙ্গিত বহন করছে।
কার্যনির্বাহী সদস্য, ময়মনসিংহ জেলা আওয়ামীলীগ
গৌরীপুর, ময়মনসিংহ