ভাষাসৈনিক রফিকউদ্দিন

MS ISLAM _ BDTutorials2
0


‘ওরা আমার মুখের ভাষা কাইরা নিতে চায়’ এই বিপ্লবী মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে রাজপথে নেমেছিলো প্রতিবাদের স্রোত। 
সেদিনের প্রতিবাদী মিছিলে প্রাণ দেয় অকুতোভয় দেশপ্রেমিক বাঙালি। নিজের মুখের ভাষা রক্ষার জন্য জীবন দেওয়ার ইতিহাস আরও কারো নেই। এতোটা ত্যাগ আর আত্মদান কেবল তৎকালীন পুর্ব পাকিস্থান আর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের পক্ষেই রয়েছে এমন অনন্য ইতিহাস। পশ্চিম পাকিস্তানের অন্যায্য বর্বর দাবীর বিপরীতে ছিলো এই আত্মদান। ভাষার মর্যাদা রক্ষার জন্য যারা জীবন উৎসর্গ করেছেন ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন আহমদ তাদের অন্যতম। বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে রাজপথে নেমে ভাষার জন্য জীবন উৎসর্গ করেছিলেন তিনি।
১৯২৬ সালের ৩০ অক্টোবর মানিকগঞ্জের সিংগাইরের পারিল বলধারা গ্রামে জন্ম রফিকউদ্দিনের। 
রফিক উদ্দিনের পিতার নাম আবদুল লতিফ ও মাতার নাম রাফিজা খাতুন। তাঁর পিতা আবদুল লতিফ ছিলেন ব্যবসায়ী, কলকাতায় ব্যবসা করতেন। রফিকরা ছিল পাঁচ ভাই ও দুই বোন। ভাইদের মধ্যে রফিক ছিল সবার বড়। চার ভাই আবদুর রশীদ, আবদুল খালেক, বীর মুক্তিযোদ্ধা আবদুস সালাম, খোরশেদ আলম এবং বোন আলেয়া বেগম, জাহানারা বেগম। রফিক ছিল পিতা-মাতার প্রথম সন্তান।
শৈশবে গ্রামের স্কুলেই তিনি লেখাপড়া করেন। মরহুম আশরাফ উদ্দিন চৌধুরী ও বীরেন্দ্রমোহন দত্তগুপ্ত শিক্ষকদ্বয়ের সুযোগ্য ছাত্র হিসাবে প্রাথমিক শিক্ষা শেষ করেন।
রফিক বাল্যকালে কিছুটা দুরন্ত আর ডানপিটে ছিলেন। তাই গাছ থেকে পড়ে তার হাত ভেঙ্গে চিকিৎসার জন্য কলকাতা যান। কলকাতা আবস্থানের সময় মিত্র ইনিস্টিটিউশনে শিক্ষা লাভ করেন। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর রফিকউদ্দিনের পিতা ঢাকায় চলে আসেন। এখানে বাবুবাজারে আকমল খাঁ রোডে পারিল প্রিন্টিং প্রেস নামে ছাপাখানা চালু করেন। ঢাকায় এসে রফিক বায়রা স্কুলে ভর্তি হয়ে ১৯৪৯ সালে প্রবেশিকা পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। বায়রা স্কুল থেকে ম্যাট্রিক পাস করে রফিকউদ্দিন মানিকগঞ্জ ‘দেবেন্দ্রনাথ কলেজে’ বাণিজ্য বিভাগে ভর্তি হন। আই.কম. ক্লাস পর্যন্ত পড়লেও পরে পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়। ঢাকায় এসে পিতার সঙ্গে প্রেস পরিচালনা করতে শুরু করেন। পরে ঢাকার জগন্নাথ কলেজে (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হন। ১৯৫২ সালে তিনি জগন্নাথ কলেজের (বর্তমান জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়) হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র ছিলেন।
যখন পশ্চিম পাকিস্তানিরা উর্দু ভাষাকে এদেশের মানুষের উপর চাপিয়ে দিতে চায় তখন এখানকার বাংলা ভাষাভাষী বাঙালিরা সেই অন্যায়ের বিরুদ্ধে ফুঁসে ওঠে। সংখ্যাগরিষ্ঠের ভাষা হিসেবে বাংলা ভাষাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবিতে ১৯৫২-র ২১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা মেডিকেল কলেজের সম্মুখের রাস্তায় ১৪৪ ধারা ভেঙ্গে বিক্ষোভ প্রদর্শনরত ছাত্র-জনতার মিছিলে রফিক অংশগ্রহণ করেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের হোস্টেল প্রাঙ্গনে পুলিশ গুলি চালালে সেই গুলি রফিকউদ্দিনের মাথায় লাগে। গুলিতে মাথার খুলি উড়ে গিয়ে ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। মেডিকেল হোস্টেলের ১৭ নম্বর রুমের পূর্বদিকে তার লাশ পড়ে ছিল। ছয় সাত জন ধরাধরি করে তার লাশ এনাটমি হলের পেছনের বারান্দায় এনে রাখেন। তাদের মাঝে ডাঃ মশাররফুর রহমান খান রফিকের গুলিতে ছিটকে পড়া মগজ হাতে করে নিয়ে যান। রাতে তাকে কবর দেওয়া হয় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে।
ভাষাশহীদ রফিকউদ্দিন বাঙালির গর্ব, বাঙালির অহংকার। তিনি তার কীর্তির জন্য বাঙালির কাছে চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

তথ্যসূত্রঃ https://www.sahos24.com/biography/11352/world

Post a Comment

0Comments
Post a Comment (0)