মানিকগঞ্জ শহরের নিকটবর্তী গ্রাম মত্ত। এই গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন। মত্ত গ্রামের সুবিশাল মঠের পাশেই ড. অমর্ত্য সেনের বাড়ি। আগে এই বাড়ি জজবাড়ি হিসেবে চিনতেন মত্ত গ্রামের মানুষ।
১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে জজবাড়ির লোকেরা ভারতে চলে যান। এক সময় বিখ্যাত ছিল মত্ত গ্রামের জজবাড়িটি। এখন জজবাড়ির সকল অবকাঠামো কালের গর্ভে সব হারিয়ে গেছে। এখন লিজ নিয়ে এই বাড়িতে ১০-১২ টি পরিবার বসবাস করে।
১৯১৮ সালথেকে ১৯২০-এর মাঝামাঝি সময়ে সারদা প্রসাদ সেন বৃটিশ সরকারের কাছ থেকে পেয়েছিলেন দেওয়ান বাহাদুর উপাধি। পেশায় ছিলেন সেশন জজ। তার ছোট ভাই অন্বিকা প্রসাদ সেনও ছিলেন সাবজজ। আর এ কারণে তাদের এ বাড়িটি সবাই জজবাড়ি বলতো। সারদা প্রসাদের ছেলে বিলেত পড়া আশুতোষ সেন শান্তিনিকেতনে গিয়েছিলেন ‘নটির পূজা’নাটকটি দেখতে। নাটকের অভিনেত্রী অমিতাকে ভালো লেগে যায় তার। সিদ্ধান্ত নেন তাকেই জীবনসঙ্গী করবেন। বাবাও অমত করেননি। সেই সুবাদে অমিতাকে বিয়ে করে আশুতোষ সেন ফিরে আসেন মানিকগঞ্জের ওই মত্ত গ্রামে। এই আশুতোষ সেন আর অমিতা সেনের ঘরেই জন্ম নিয়েছিলেন নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ, নোবেল জয়ী ড. অমর্ত্য সেন।
জজবাড়ির দুই জজ ভাই বাইরে থাকলেও তাদের বাবা মা স্থায়ীভাবেই থাকতেন এ বাড়িতে। আর অমর্ত্য সেন
নিজের বাবা মায়ের সঙ্গে ঢাকার ওয়ারীর বাড়িতে বড়
হয়েছেন। অমর্ত্য সেনের বাবা আশুতোষ সেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রসায়নের অধ্যাপক ছিলেন। দেশ ভাগের
পরে আশুতোষ সেন দিল্লিতে ওয়েস্ট বেঙ্গল পাবলিক সার্ভিস কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। তবে বিভিন্ন উৎসব, পূজা পার্বণের ছুটি পেলেই বাবা-মায়ের সঙ্গে ছুটে আসতেন অমর্ত্য সেনও। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের আগে জজবাড়ির লোকেরা অনেক স্মৃতি, অনেক মায়া পিছনে ফেলে ভারতে চলে যান।
১৯৮৮ সালে বন্যার আগে,অমর্ত্য সেন নোবেল পদক পাননি তখন একবার হঠাৎ করেই নাড়ির টানে পূর্ব পুরুষের ভিটেমাটির মত্ত গ্রামে এসেছিলেন।
আমরা মানিকগঞ্জবাসী গর্বিত অমর্ত্য সেনের মতো বিশ্ববিখ্যাত ব্যক্তিত্ব আমাদের মানিকগঞ্জের সন্তান।