বাংলা নববর্ষ এবং ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি
সৃষ্টিকুলের সেরা জীব, স্রষ্টার শ্রেষ্ঠ সৃষ্টি আশরাফুল মাখলুকাত-মানুষ হলো সামাজিক জীব এবং সমাজবদ্ধভাবে বাস করে। মানুষের এই সমাজবদ্ধতার সাথে সংস্কৃতি এবং ভাষার উদ্ভব জড়িত রয়েছে। পরস্পর পরস্পরের কাছে মনের ভাব প্রকাশ করার জন্য ভাষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য। আর ভাষার সাথে নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে সংস্কৃতির ।
ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় মানুষ কিছু আনন্দ এবং স্মৃতিকে আপন করে নেয়। আর এ আপন করে নেওয়ার বিভিন্ন স্তর এবং সময়ের পথ ধরে সংস্কৃতির বিকাশ। প্রতিটি জাতি ও সভ্যতা সংস্কৃতির মাধ্যমে খুঁজে পায় তার নিজস্ব অনুভূতি এবং স্বকীয় বৈশিষ্ট্য। বাংলাদেশী ও বাঙালী জাতি হিসেবে, ইতিহাস এবং ঐতিহ্যের ধারাবাহিকতায় আমাদের এমন একটি উঠসব হল পহেলা বৈশাখ। পহেলা বৈশাখ হলো বাংলা নববর্ষের প্রথম দিন । স্বাগতম,সুস্বাগতম বাংলা নববর্ষ।
এদেশের সাম্প্রদায়িক শক্তি বারবার চেষ্টা করেছে বৈশাখের ঐতিহ্যকে রুখে দিতে, তারা ইতিহাসকে ধ্বংস করতে চেয়েছে, তারা "হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি" বলে প্রচার করেছে । যারা আজকে পহেলা বৈশাখকে বাংলার হিন্দুয়ানী সংস্কৃতি বলে দাবী করছেন, তাদেরকে বিনয়ের সাথে বলি, আপনারা একবারও কি জানতে চেষ্টা করেছেন পহেলা বৈশাখের প্রচলন কোথায় থেকে হলো? আর ঐতিহ্যকে সকল বাধা বিপত্তি পেরিয়ে এ প্রজন্মের একজন বাঙালীকে বৈশাখ যা শেখায় তা হলো সংগ্রাম করার সংকল্প। সুতরাং আসুন আমরা দেখে নেই পহেলা বৈশাখ তথা বাংলা সনের ইতিহাস।
বাংলা সনের ইতিহাসঃ
পাকিস্তান সরকারের এই অন্যায় আচরণের জবাব দিতেই "ছায়ানট" ১৯৬৫ সালের ১৪ এপ্রিল (১লা বৈশাখ, বাংলা ১৩৭২ সন) রমনার বটমূলে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের "এসো হে বৈশাখ এসো এসো" গানটি দিয়ে সর্বপ্রথম যাত্রা শুরু করে। বস্তুত এই দিনটি থেকেই "পহেলা বৈশাখ" বাঙালী সংস্কৃতির অন্যতম এক পরিচায়ক রূপ ধারণ করে। ১৯৭২ সালে (বাংলা ১৩৭৯ সন) 'পহেলা বৈশাখ' বাংলাদেশের জাতীয় পার্বন হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবার আগ পর্যন্ত পাকিস্তান সরকার ২১এ ফেব্রুয়ারীর মতোই থামিয়ে দিতে চেয়েছে বৈশাখের উদযাপন। আজো পাকিস্থান সমর্থকগনই নববর্ষের বিরোধিতা করে। ওই গোষ্ঠির লোকজন শুধু নববর্ষের বিরোধিতাই যে করে, তা নয় ওরা যে কোন কাজের মধ্যেই ধর্ম নিয়ে টানাটানি করে। ওরা বলে ধর্মে এই নাই, ওই নাই। আমি ওদের জিজ্ঞাস করবো, এইযে আমরা মোবাইল, কম্পিউটার, টেকনোলোজি ব্যবহার করছি এটা কি কোন ধর্মে লিখা ছিল? যদি না থাকে তাহলে কেন তা ব্যবহার করছেন? হয়তো বলবেন, এটা তো আপনি ভাল কাজে ব্যবহার করছেন। আমি বলবো খারাপ কাজেও তো অনেকে ব্যবহার করছে, মোট কথা সব কাজেরই তো ভাল এবং মন্দ দিক আছে। তাই আমি বলবো কোন ব্যক্তি বিশেষ যদি অন্যায়ের সাথে যুক্ত থাকে, তার শাস্তি দাবি করুন এবং আমিও করি। আমি তীব্রভাবে আরো দাবি করছি, যারা বৈশাখী উৎসবের নামে উন্মত্ততায় মাতে, যারা ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির নামে নিকৃষ্ট কর্মে লিপ্ত হয় তাদের কোঠর শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু ঢালাও ভাবে ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপক্ষে আমি যেতে অপারগ, কারণ আমার ইসলামও ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির বিপক্ষে নয় বরঞ্চ পক্ষে।
আপনারা ইতিহাস দেখুন, যার হাত দিয়ে বৈশাখ কিংবা বাংলা নববর্ষের গোড়াপত্তন হয়েছে তিনি কেবল মুসলমানই ছিলেন না বরং সারা মুসলিম বিশ্বে একজন নামকরা, উদারপন্থি শাসক হিসেবে আজও পরিচিত তিনি হচ্ছেন সেই জালালুদ্দিন মুহাম্মদ আকবর।
আমাদের দেশে প্রচলিত বঙ্গাব্দ বা বাংলা সন মূলত ইসলামী হিজরী সনেরই একটি রূপ। ভারতে ইসলামী শাসনামলে হিজরী পঞ্জিকা অনুসারেই সকল কাজকর্ম পরিচালিত হতো। মূল হিজরী পঞ্জিকা চান্দ্র মাসের উপর নির্ভরশীল। চান্দ্র বসর সৌর বসরর চেয়ে ১১/১২ দিন কম হয়। কারণ সৌর বসর ৩৬৫ দিন, আর চান্দ্র বসর ৩৫৪ দিন। একারণে চান্দ্র বৎসরে ঋতুগুলি ঠিক থাকে না। আর চাষাবাদ ও এজাতীয় অনেক কাজ ঋতুনির্ভর। এজন্য ভারতের মোগল সম্রাট আকবারের সময়ে প্রচলিত হিজরী চান্দ্র পঞ্জিকাকে সৌর পঞ্জিকায় রূপান্তরিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
সম্রাট আকবার তার দরবারের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ও জ্যোতির্বিদ আমির ফতুল্লাহ শিরাজীকে হিজরী চান্দ্র বর্ষপঞ্জীকে সৌর বর্ষপঞ্জীতে রূপান্তরিত করার দায়িত্ব প্রদান করেন। ৯৯২ হিজরী মোতাবেক ১৫৮৪ খৃস্টাব্দে সম্রাট আকবার এ হিজরী সৌর বর্ষপঞ্জীর প্রচলন করেন। তবে তিনি ঊনত্রিশ বছর পূর্বে তার সিংহাসন আরোহনের বছর থেকে এ পঞ্জিকা প্রচলনের নির্দেশ দেন। এজন্য ৯৬৩ হিজরী সাল থেকে বঙ্গাব্দ গণনা শুরু হয়। ইতোপূর্বে বঙ্গে প্রচলিত শকাব্দ বা শক বর্ষপঞ্চির প্রথম মাস ছিল চৈত্র মাস। কিন্তু ৯৬৩ হিজরী সালের মুহাররাম মাস ছিল বাংলা বৈশাখ মাস, এজন্য বৈশাখ মাসকেই বঙ্গাব্দ বা বাংলা বর্ষপঞ্জির প্রথম মাস এবং ১লা বৈশাখকে নববর্ষ ধরা হয়।
মোগল সময় থেকেই পহেলা বৈশাখে বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে কিছু অনুষ্ঠান করা হতো। প্রজারা চৈত্রমাসের শেষ পর্যন্ত খাজনা পরিশোধ করতেন এবং পহেলা বৈশাখে জমিদারগণ প্রজাদের মিষ্টিমুখ করাতেন এবং কিছু আনন্দ উৎসব করা হতো। এছাড়া বাংলার সকল ব্যবসায়ী ও দোকানদার পহেলা বৈশাখে ‘হালখাতা’ করতেন। পহেলা বৈশাখ এসব কর্মকাণ্ডের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। এটি মূলত: রাষ্ট্রিয়, সামাজিক, অর্থনৈতিক বিভিন্ন নিয়ম-কানুনকে সুন্দরভাবে সাজিয়ে কাজ-কর্ম পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ছিল।
যে দিন বৈশাখ বাংলা সনের প্রথম মাস হয়ে এলো সেদিন হতেই বৈশাখের আনন্দটি নবান্নের আনন্দের চেয়েও আরও বড় আলাদা আঙ্গিক পেতে শুরু করে। মহাজন ও ব্যবসায়ীরা বৈশাখেই‘হালখাতা’ অনুষ্ঠান চালু করেন। হালখাতা হলো যে বছরটি চলে গেল সেই বছরের হিসাবের যোগ বিয়োগ করে পুরনো খাতাটি তুলে রেখে নতুন বছরের প্রথম দিন নতুন খাতায় হিসাব চালু করা। প্রবীণরা বলেন, লাল সালু কাপড়ের মলাটে মোড়ানো নতুন এই হিসাব খাতায় উপরে লেখা হতো ‘এলাহী ভরসা।’ এই এলাহী শব্দটিও সম্রাট আকবরের ‘তারিখ ই এলাহী’থেকে এসেছে বলে জানা যায়।
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণঃ
বঙ্গাব্দের বারো মাসের নামকরণ করা হযেছে নক্ষত্রমন্ডলে চন্দ্রের আবর্তনে বিশেষ তারার অবস্থানের উপর ভিত্তি করে । বাংলা মাসের এই নামগুলি হচ্ছেঃ
• বৈশাখ - বিশাখা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• জ্যৈষ্ঠ - জ্যেষ্ঠা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আষাঢ় - উত্তর ও পূর্ব আষাঢ়া নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• শ্রাবণ - শ্রবণা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ভাদ্র -উত্তর ও পূর্ব ভাদ্রপদ নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• আশ্বিন - অশ্বিনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• কার্তিক - কৃত্তিকা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• অগ্রহায়ণ(মার্গশীর্ষ) - মৃগশিরা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• পৌষ - পুষ্যা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• মাঘ - মঘা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• ফাল্গুন - উত্তর ও পূর্ব ফাল্গুনী নক্ষত্রের নাম অনুসারে
• চৈত্র - চিত্রা নক্ষত্রের নাম অনুসারে
সম্রাট আকবর কর্তৃক প্রবর্তিত তারিখ-ই-ইলাহী-র মাসের নামগুলি প্রচলিত ছিল পারসি ভাষায়, যথা:
ফারওয়াদিন, আর্দি, ভিহিসু, খোরদাদ, তির, আমারদাদ, শাহরিযার, আবান, আযুর,দাই, বহম এবং ইসক্নদার মিজ।
বাংলা দিনের নামকরণঃ
বাংলা সন অন্যান্য সনের মতোই সাত দিনকে গ্রহণ করেছে এবং এ দিনের নামগুলো অন্যান্য সনের মতোই তারকামন্ডলীর উপর ভিত্তি করেই করা হয়েছে।
• সোমবার হচ্ছে সোম বা শিব দেবতার নাম অনুসারে
• মঙ্গলবার হচ্ছে মঙ্গল গ্রহের নাম অনুসারে
• বুধবার হচ্ছে বুধ গ্রহের নাম অনুসারে
• বৃহস্পতিবার হচ্ছে বৃহস্পতি গ্রহের নাম অনুসারে
• শুক্রবার হচ্ছে শুক্র গ্রহের নাম অনুসারে
• শনিবার হচ্ছে শনি গ্রহের নাম অনুসারে
• রবিবার হচ্ছে রবি বা সূর্য দেবতার নাম অনুসারে
বাংলা সনে দিনের শুরু ও শেষ হয় সূর্যোদয়ে । ইংরেজি বা গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির শুরু হয় যেমন মধ্যরাত হতে ।
বাংলা সনের সংস্কারঃ
সন একটি আরবী শব্দ। পবিত্র কোরআন মজিদে সূরা আনকাবুত এ সানা বা বছর সম্পর্কে উল্লেখ রয়েছে এই সানা শব্দের পরিবর্তিত রূপই সন। আর সাল শব্দটি উর্দু ও ফার্সী ভাষায় ব্যবহৃত হয়। বাংলায় সনকে অব্দ বা সাল নামে অভিহিত করা হয়। বাংলা একাডেমী কর্তৃক বাংলা সন সংস্কারের উদ্যোগ নেয়া হয় ১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৯৬৬ সালে। ডঃ মুহম্মদ শহীদুল্লাহ'র নেতৃত্বে এ কমিটি বিভিন্ন বাংলা মাস ও ঋতুতে গ্রামীণ জনগোষ্ঠীর আর্থ-সাংস্কৃতিক জীবনে কিছু সমস্যা ও প্রতিবন্ধকতাকে নির্ণয় করে সেগুলো হতে উত্তরণের প্রস্তাবনা প্রদান করেন । বাংলা সনের ব্যাপ্তি গ্রেগরিয়ান বর্ষপঞ্জির মতোই ৩৬৫ দিনের। যদিও সেখানে পৃথিবীর সূর্যকে প্রদক্ষিণের পরিপূর্ণ সময়কেই যথাযথভাবে নেয়া হয়েছে। এ প্রদক্ষিণের মোট সময় ৩৬৫ দিন ৫ ঘণ্টা ৪৮ মিনিট এবং ৪৭ সেকেন্ড। এই ব্যবধান ঘোচাতে গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারে প্রতি চার বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে একটি অতিরিক্ত দিন যোগ করা হয়। ব্যতিক্রম হচ্ছে সে শতাব্দীতে যে শতাব্দীকে ৪০০ দিয়ে ভাগ করা যায় না বা বিভাজ্য নয় । জ্যোতির্বিজ্ঞান নির্ভর হলেও বাংলা সনে এই অতিরিক্ত দিনকে আত্মীকরণ করা হয়নি। বাংলা মাস অন্যান্য সনের মাসের মতোই বিভিন্ন পরিসরের হয়ে থাকে। এই সমস্যাগুলোকে দূর করার জন্য ডঃ মুহম্মদ শহীদূল্লাহ কমিটি বাংলা একাডেমীর কাছে কতকগুলো প্রস্তাব পেশ করে। এগুলো হচ্ছেঃ-
• বছরের প্রথম পাঁচ মাস অর্থাৎ বৈশাখ হতে ভাদ্র হবে ৩১ দিনের;
• বাকী মাসগুলো অর্থাৎ আশ্বিন হতে চৈত্র হবে প্রতিটি ৩০ দিনের মাস;
• প্রতি চতুর্থ বছরের ফাল্গুন মাসে অতিরিক্ত একটি দিন যোগ করে তা হবে ৩১ দিনের।
বাংলাদেশে ইসলামের জয়জয়কার এনেছেন ওলি-আউলিয়া গাউছ কুতুব আলেম সমাজ। এই ওলি-আউলিয়া গাউছ কুতুব আলেম ও সুফি সাধকদের অক্লান্ত পরিশ্রম ও ঐকান্তিক নিষ্ঠা ও শ্রমের ফলে সর্বপ্রথম বাংলাদেশে ইসলামের সূচনা হয় এবং প্রচার, প্রসার ও প্রতিষ্ঠা লাভ করে। আরব, ইয়েমেন, ইরাক, ইরান, খোরাসান, মধ্য এশিয়া ও উত্তর ভারত থেকে ওলি-আউলিয়া গাউছ কুতুব আলেম ও সুফীগণ বাংলায় আগমন করেন। ইসলাম প্রচার ও প্রসারের ক্ষেত্রে তারা এক অবিস্মরণীয় অবদান রাখেন। তাঁদের কথা কাজকর্মে এককথায় তাদের মোহনীয় আচার ব্যবহারে উজ্জীবিত হয়ে হিন্দু ও অন্যান্য সম্প্রদায় দলে দলে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আশ্রয় নেয়। আর আজকের কিছু কাঠমোল্লা ও কিছু মূর্খ আলেমদের সাথে আমাদের দেশের কিছু ভণ্ড দল গাট্টা মেরে কথায় কথায় মুসলমানদের নাস্তিক, কাফের মুরতাদ বলে গালি দেয়। ওরা বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য ও সংস্কৃতিকে ঘৃণা করে। শুধু বাংলার সংস্কৃতিকে ঘৃণা করেই ক্ষান্ত দেয়নি, ওরা বাঙ্গালির নববর্ষ অনুষ্ঠান সহ অন্যান্য বাঙ্গালিয়ানা অনুষ্ঠানে বোমা মারে। তাই আমি ওদের বলি আমার সোনার বাংলায় মুসলিম বিজয়ের পূর্বে যে সকল অলি-আউলিয়া গাউছ কুতুব আলেম ও সুফী দরবেশ ইসলাম প্রচার করেছেন তাদের জীবনী পড়ুন, দেখুন তারা কি আমার দেশের ভাষা ও সংস্কৃতিকে ঘৃণা করে ইসলাম প্রচার করেছেন? নাকি উনারা আমার মায়ের ভাষাকে সম্মানের সহিত গ্রহণ করে ইসলামের দাওয়াত ঘরে ঘরে পৌঁছে দিয়েছেন। উনারা কি বোমা মেরে মানুষকে ইসলামের সুশীতল ছায়াতলে আহবান করেছেন, নাকি মোহনীয় আচার-ব্যবহারই উনাদের প্রতি মানুষ আকৃষ্ট হয়েছেন! আজকে যিনারা কথায় কথায় ধর্ম নিয়ে বারাবারি করছেন, তাদেরকে বলি বাংলার সহজ সরল মানুষদের আর বিভ্রান্ত করবেন না, কারণ ধর্মীয় গোঁড়ামির কারনেই আজকে অনেকেই ইসলাম থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। তাই আসুন আমরাতো ধর্মের তেমন কিছু করতে পারছিই না, তবে আমাদের গোঁড়ামির কারণে যেন আমাদেরই কোন ভাই আমাদের থেকে বিচ্যুত না হয়।
"আইলো নতুন বছর লইয়া নব সাজ, কুঞ্জে ডাকে কোকিল-কেকা বনে গন্ধরাজ" 'মৈমনসিংহ গীতিকা'য় বাংলা নববর্ষের এমন আবাহন ধ্বনিত হয়েছে। মোটামোটি ভাবে এই হল আমাদের বাঙালী ঐতিহ্য, এটাই হল আমাদের বৈশাখের ঐতিহ্য। সকল প্রতিকূলতা পেড়িয়ে আসুন আমরা বাংলা বর্ষকে বরণ করে নেই কিন্তু সেটা যেন অশ্লীলতা বা বেহায়াপনার পর্যায়ে না যায়। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা জানিয়ে লেখায় ভুলত্রুটি ক্ষমা চেয়ে এবং কবি’র কাব্য দিয়ে শেষ করছি____
লালে লাল ফুল্ল সাজে কৃষ্ণচূড়া,
অনিন্দ্য উল্লাসে জাগে বসুন্ধরা ।
দিগন্ত দুয়ারে দেখ স্বস্তির হাঁক,
খুশির বার্তা নিয়ে এলোরে বৈশাখ।
এলোরে বৈশাখ, এলোরে বৈশাখ।
বৈশাখী অভ্রে মেঘ করে যখন খেলা,
মনের প্লাবনে ভাসাই প্রেমের ভেলা।
প্রেমের তেজে হিংসা, হয়ে যাক খাক,
সুখের বার্তা নিয়ে এলোরে বৈশাখ।
এলোরে বৈশাখ, এলোরে বৈশাখ।
মোহাম্মাদ সহিদুল ইসলাম
১৩/০৪/২০১৬