স্রষ্টার অস্তিত্ব বিশ্বাস মাত্রই ধর্মান্ধতা?
বহু মানুষ একটা ধারণার কথা বলেন, যে সবকিছুরই স্রষ্টা থাকে। যেমন একটা কলমের কথা বলা যায়। কেউ না কেউ এটা তৈরী করেছে। স্রষ্টা ছাড়া কলম হয়নি। এর মানে কি মহাবিশ্ব তথা আমাদেরও একজন স্রষ্টা আছেন? অত্যন্ত যৌক্তিক প্রশ্ন?
আচ্ছা ধরুণ যুক্তি মেনে বলা হল, যে থাকাই স্বাভাবিক। তাহলে আর একটি প্রশ্নও তো যৌক্তিক, যে সবকিছুর যেহেতু স্রষ্টা থাকে; সেই সূত্র মেনে, স্রষ্টার স্রষ্টা কে?
বিশ্বাসীরা বলে থাকেন স্রষ্টার কোনো স্রষ্টা নেই। স্রষ্টা কবে থেকে ছিলেন কেউ তা জানে না। তবে তিনিই প্রথম। আর ঠিক এ কারণেই তিনি স্রষ্টা। তাঁর সৃষ্টিই এই মহাবিশ্ব এবং আমরা।
ঠিক একই ধরণের যুক্তি বলে, যে স্রষ্টাকে যদি সবকিছুর প্রথম ধরা হয়; তাহলে মহাবিশ্বকে প্রথম ধরতে অসুবিধা কোথায়? যুক্তি মেনে চললে, অবশ্যই দ্বিমত করার সুযোগ নেই।
তবে, এক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি করেছে ধর্মগুলো। সুনির্দিষ্টভাবে বললে ইসলাম ধর্ম। মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে স্রষ্টা সম্পর্কে বলা হয়েছে, সূরা ইখলাস (১) বলুন তিনি আল্লাহ, এক। (২) আল্লাহ অমুখাপেক্ষি। (৩) তিনি কাউকে জন্ম দেননি, জন্ম নেননি। (৪) তাঁর সমতুল্য কেউ নেই।
এখানে এমন এক স্রষ্টার কথা বলা হয়েছে, যাঁর সম্পর্কে মুসলমানদের ধারণা এই ধর্মের সূচনালগ্ন থেকে এখনো পর্যন্ত অপরিবর্তনীয় রয়ে গেছে। অন্যান্য ধর্মের মত তাঁদের উপাস্যের ধারণা কোনো মূর্তি, স্রষ্টার মানবরূপ, পরিবারবর্গ বা একাধিক দেবতার প্রয়োজনীতার দ্বারা হ্রাস পায়নি। সর্বদাই তাঁরা দাবী করেন, যে স্রষ্টা সম্পর্কে তাঁদের অপরিবর্তনীয় ধারণাই একমাত্র সঠিক।
এখানে কোন ধারণাটা সঠিক সেটা বের করা আমাদের বিবেচ্য বিষয় নয়। তবে, স্রষ্টার অস্তিত্ব জানতে আমরা ইসলাম ধর্মের পবিত্র ধর্মগ্রন্থ আল কোরআনকে সূত্র হিসেবে বিবেচনায় নিতে পারি। পবিত্র কোরআনের সূরা ফাতিরে বলা হয়েছে, (২৪) নিঃসন্দেহে আমি তোমাকে (রাসূল) পাঠিয়েছি সত্যের সাথে সুসংবাদদাতা এবং সতর্ককারীরূপে। আর এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠানো হয়নি।
আয়াতের শেষ বাক্যের বর্ণনা মতে, ইসলাম ধর্ম বলছে, এমন কোনো সম্প্রদায় নেই, স্রষ্টা যাঁদের মধ্যে একজন সতর্ককারী পাঠান নি। তাহলে মানব সভ্যতার শুরু থেকেই যদি স্রষ্টা প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যে সতর্ককারী পাঠিয়ে থাকেন; সেই সূত্রে স্রষ্টা সম্পর্কে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের মধ্যেই একটা কমন জায়গা থাকা উচিত। যেহেতু ইসলাম দাবী করছে, সব সতর্ককারীই এক আল্লাহ প্রেরণ করেছেন, যাঁরা সবাই তাঁদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর মত একই স্রষ্টার বাণী প্রচার করেছেন; সেহেতু মানুষের উপাসনা বা বিশ্বাস পরিবর্তন হয়ে গেলেও কিছু সামঞ্জস্য থাকা অপরিহার্য।
সেক্ষেত্রে ইহুদীদের ধর্মগ্রন্থ বুক অফ ডিটরনমিতে লেখা আছে, অধ্যায় ৬: অনুচ্ছেদ ৪: ও ইস্রায়েলবাসী শোন, আমাদের স্রষ্টা মাত্র একজন।
যদিও বাইবেলের পুরাতন এবং নতুন উভয় সংস্করণকেই খৃস্টানরা স্রষ্টার বাণী বলে বিশ্বাস করেন, তারপরও বাইবেলের নতুন সংস্করণের ওপর তাঁদের অধিকার বেশি। বাইবেলের নতুন সংস্করণের ম্যাথিওয়ে বলা হয়েছে, অধ্যায় ৪: অনুচ্ছেদ ১০: তখন ইসা তাঁহাকে বলিলেন, দূর হও শয়তান। পাক কিতাবে লেখা আছে, প্রভু যিঁনি তোমার খোদা, তাঁহাকে তুমি সেজদা করিবে। কেবল তাঁহারই সেবা করিবে।
হিন্দুদের ধর্মগ্রন্থ জুজুর্বেদে বলা হয়েছে, তাঁর (স্রষ্টা) কোনো প্রতিমা নেই (৩২:৩)। তিনি (স্রষ্টা) নিরাকার এবং পবিত্র (৪০:৮)।
তাছাড়া শিখ বা জরোষ্ট্রীয় ধর্মেরও একই কথা।
মুসলমানদের ধর্মগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে আহবান করা হয়েছে, সূরা আলে ইমরান (৬৪) তুমি (নবী) বল, হে কিতাবীগণ, এসো সেই কথায় যা তোমাদের এবং আমাদের মধ্যে এক; যেন আমরা আল্লাহ ব্যতীত কারও ইবাদত না করি। কোনো কিছুকেই তাঁর শরীক না করি। এবং আমাদের কেউ কাউকে আল্লাহ ব্যতীত উপাস্য হিসেবে গ্রহণ না করি। যদি তাঁরা মূখ ফিরিয়ে নেয় তবে বল, তোমরা স্বাক্ষী থাক; অবশ্যই আমরা মুসলিম।
ইসলাম আত্মবিশ্বাসী। অন্যান্য ধর্মগ্রন্থে সামান্য হলেও তাঁদের সমর্থন রয়েছে। মৌলিক জায়গাটাতে তো অবশ্যই। আর এটাই গুরুত্বপূর্ণ। এ জন্য তাঁরা দাবী করতেই পারে, যে স্রষ্টাই বিভিন্ন সময়ের ধর্মগ্রন্থ সমূহের মধ্যে মৌলিক বিষয়ে মিল থাকার একমাত্র কারণ। অবিশ্বাসীরা সাথে সাথে বলতে পারে, এসব নিছকই কাকতালীয়।
আচ্ছা ঠিক আছে। এবার স্যার ফ্রেড হোয়েলের (আস্তিক নন) একটা কথা বলি। তিনি বলেছিলেন, প্রাণহীন রাসায়নিক দ্রব্যাদি থেকে প্রথম কোষের রাসায়নিক বিবর্তনের ওপর বিশ্বাস করা হল, একটি টর্নেডোর প্রচুর আবর্জনা ভর্তি একটি স্থান থেকে বোয়িং ৭৪৭ তৈরী করতে পারার ওপর বিশ্বাস করার সমান।
মানে, ব্যাপারটা হল কোনো তীব্র ঝড়, ময়লা আবর্জনা ভর্তি একটি স্থান দিয়ে যাওয়ার সময় সঠিক অংশগুলো খুঁজে বের করে একটি বোয়িং-৭৪৭ তৈরী করে দিল; এই কথাটি বিশ্বাস করা আর রাসায়নিক বিবর্তনের মাধ্যমে প্রাণহীন বস্তু থেকে প্রথম কোষের উদ্ভব হয়েছে, কথাটি বিশ্বাস করা একই কথা। সত্যিই কি এটা কাকতালীয়ভাবে হওয়া সম্ভব। আবার কল্পনা করুণ, আপনি যে মনিটরে লেখাটা পড়ছেন, সেটা কোনো মানুষ নয়; নিতান্তই একটা ঝড়ের কবলে পড়ে ঠিকঠাকভাবে তৈরী হয়েছে।
ব্যাপারটা এমন নয়, যে আপনি টস করলেন; আর অবধারিতভাবে হেড অথবা টেইল, একটা সাইড ওঠবেই। বোয়িং ৭৪৭ বা একটি মনিটর প্রস্তুত করা একটা ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার ফল। এটা কোনো অবধারিত পরিণতির ফল নয়, যে একবারে না হলে একশবারে অবশ্যই হওয়া উচিত।
এবার ঝড়ের মাধ্যমে বোয়িং ৭৪৭ বা মনিটর তৈরী হওয়ার ব্যাপারটা অবিশ্বাস্য লাগছে? তাহলে আবার ফিরতে হয় সেই পুরোনো ধারণার কাছে ‘সবকিছুরই স্রষ্টা থাকে’। তখন সেই একই যৌক্তিক প্রশ্ন: তাহলে স্রষ্টার স্রষ্টা কে?
আচ্ছা এই শেষ প্রশ্নটাও কি সত্যিই যৌক্তিক?
স্রষ্টার যদি স্রষ্টা থাকেন, তাহলে তিনি আর স্রষ্টা থাকেন কি করে? স্রষ্টাকেই তো সৃষ্টির শুরু করতে হবে। নইলে তো তিনি নিজেই সৃষ্টির অর্ন্তভূক্ত হয়ে যাবেন। এটা কি সম্ভব যে, মহাবিশ্ব নিজে থেকে নয়, স্রষ্টার ইচ্ছাতেই মহাবিশ্বে পরিণত হয়েছে?
বিগব্যঙ তত্ত্ব এমন অনেকগুলো প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে, যার কোনো সঠিক উত্তর দেওয়ার মত পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা আমাদের পৃথিবীতে নেই। এর মধ্যে রয়েছে অদৃশ্য শক্তি, অদৃশ্য বস্তু, মহাজাগতীক স্ফীতিশীলতা ইত্যাদি থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলো। এগুলো পদার্থবিজ্ঞানের সমাধানহীন সমস্যা হিসেবে চিহিৃত। কিন্তু মানুষের পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা যদি কোনো সময় নাটকীয়ভাবে বেড়ে যায়, তখনও কি এই প্রশ্নগুলোর উত্তর অজানা থেকে যাবে? আমরা চাইনা শুধুমাত্র জ্ঞানের গ্যাপগুলোর জায়গায় আমরা স্রষ্টাকে কল্পনা করি। আবার এমন স্বাধীনতা চাইনা, বাস্তবে যার অস্তিত্ব নেই। আর এমন অস্তিত্বকে অস্বীকার করতে চাইনা, যা আমরা দেখতে পাই না।
স্রষ্টা দেখার মত সত্ত্বা নন; তাই বলে কি পৃথিবী স্থির? আমরা চলাফেরার সময় তো এর জঙ্গমতাকেও টের পাচ্ছি না। তাহলে সরাসরি স্রষ্টাকে অস্বীকার করাও কি জ্ঞানের গ্যাপ?
মানুষ এক সময় মধ্যাকর্ষণ শক্তি সম্পর্কে জানত না। কিন্তু জানত না বলে কি মধ্যাকর্ষণ শক্তির অস্তিত্ব ছিল না? মধ্যাকর্ষণ শক্তি তাঁকে ধরে রাখেনি? বিশ্বতাত্ত্বিক নীতি অনুসারে মহাবিশ্বকে যখন যথেষ্ট বৃহৎ স্কেলের দূরত্বের সাপেক্ষে দেখা হয়, তখন এর কোনো নির্দিষ্ট বা বিশিষ্ট দিক ও স্থান পাওয়া যায় না। এই নীতিকে সত্য মেনেই হাবল প্রমাণ করেছিলেন যে মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। কিন্তু এই তত্ত্ব স্বয়ং আইনস্টাইন কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত অসীম এবং অপরিবর্তনীয় বিশ্ব তত্ত্বের সম্পূর্ণ বিরোধী। সমস্যা এটা নয়; সমস্যা হল স্বতঃস্ফূর্ত মহাবিশ্বের দৃশ্য এবং অদৃশ্যমান পদার্থগুলো সম্প্রসারণের এই যে অসীম স্পেস, সেটা কোথা থেকে এসেছে?
এটি কি একটি সমাধানহীন সমস্যা?
এখনো পর্যন্ত আমাদের সৌর জগতে পৃথিবী ভিন্ন অন্য কোনো গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব পাওয়া যায়নি। বর্তমানে মানুষের তৈরী সবচেয়ে গতিময় স্পেসযানের নাম ভয়েসার-১। ঘন্টায় এর গতি ৩৫ হাজার মাইল। যদি এটি নিকটতম নক্ষত্র প্রক্সিমায় যেতে চায় তাহলে এর সময় লাগবে প্রায় ৭৫ হাজার বছর। তার মানে কি একটু ঝুঁকি নিয়ে বলেই দেওয়া যায়, যে মানুষের পক্ষে বাইরের জগতে প্রাণ আছে কিনা তার সন্ধান করা সম্ভব নয়। বাস্তবে অসীম স্পেসটা কিভাবে সৃষ্টি হয়েছে তার সমাধান এর চেয়েও অনেক বেশি জটিল।
প্রাণী জগতে বিবর্তনের মাধ্যমে কেবল মানুষের বুদ্ধির এতটা উৎকর্ষ কেন সাধিত হয়েছে? বা স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রাণের উৎপত্তির কোনো গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা নেই কেন? এই প্রশ্নগুলো সত্যিকার অর্থে জ্ঞানের গ্যাপজনিত কোনো সমস্যা নয়। এগুলো হল একজন পরমনির্ভরতাকে নিয়ে ভাবনা শুরু করার গুরুত্বপূর্ণ কিছু উপাদান।
পরমনির্ভরতা বা স্রষ্টা আছেন; যদি কেউ বলে চাক্ষুস প্রমাণ চাই। তাহলে বলতে হয়, তা নেই এবং থাকার কথাও নয়। কারণ ধর্ম (ইসলাম) মতে তিনি কোনোদিন মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে বলেননি, যে আমিই তোমাদের স্রষ্টা। তিনি সেটা বলবেনও না এ কারণে, যে তাহলে মানুষ নামের এই বিশেষ সৃষ্টিটি অর্থহীন হয়ে যায়। পবিত্র কোরআনে সূরা আনআমে বলা হয়েছে, (৩৫) ...আল্লাহ ইচ্ছা করিলে তাঁহাদের (মানুষ) সকলকে অবশ্যই সৎপথে একত্র করিতেন। সুতরাং তুমি মূর্খদের অন্তর্ভূক্ত হইও না।
স্রষ্টার ওপর মানুষের বিশ্বাস জন্মানোই যদি ধর্মের (ইসলাম) কথা হয়ে থাকে, তাহলে স্রষ্টার দেখা দেওয়ার কোনো কারণ নেই। তিনি মানুষ নামের একটি জীবকে যুক্তি, বুদ্ধি এবং উপলব্ধির ক্ষমতা দিয়েছেন। আর মানুষ তাঁকে চাক্ষুস না দেখেও স্রষ্টা হিসেবে উপলব্ধি করার জন্য সৃষ্টি করেছেন অসংখ্যা নিদর্শন।
বিগব্যঙ তত্ত্ব বলে আজ থেকে ১৩.৭ বিলিয়ন বছর পূর্বে এই মহাবিশ্ব একটি অতি ঘন এবং উত্তপ্ত অবস্থা থেকে সৃষ্টি হয়েছিল। বিজ্ঞানী এডউইন হাবল প্রথম বলেন, দূরবর্তী ছায়াপথ সমূহের বেগ সামগ্রিকভাবে পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে এরা পরষ্পর দূরে সরে যাচ্ছে। অর্থাৎ মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে। এই তত্ত্ব সমূহের সাহায্যে অতীত বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, যে সমগ্র মহাবিশ্ব একটি সুপ্রাচীন বিন্দু অবস্থা থেকে উৎপত্তি লাভ করেছে। এই অবস্থায় সকল পদার্থ এবং শক্তি অতি উত্তপ্ত এবং ঘন অবস্থায় ছিল।
পবিত্র কোরআনে সূরা হামিম সাজদায় বলা হয়েছে (১১) অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন, যা ছিল ধুম্রপুঞ্জ...। সূরা যারিয়াতে বলা হয়েছে (৪৭) আমি আমার ক্ষমতাবলে আকাশ নির্মাণ করেছি এবং আমিই এর সম্প্রসারণকারী।
মানুষের জন্য এগুলো হল নিদর্শন। ১৪০০ বছর আগে মানুষ এসব জানত না। স্রষ্টা সরাসরি না এসে, কেবল ওহীর মাধ্যমেই এমন অসংখ্যা নিদর্শন মানুষের সামনে রেখেছেন। যেন মানুষ তাঁর বিচার, বুদ্ধি দিয়ে স্রষ্টাকে উপলব্ধি করে নেয়। তারপরও কেউ বলতে পারে এসব নিছক কাকতালীয়। বলতে পারে এসবে বিজ্ঞানের কোনো অস্তিত্বই নেই। আমরা এসব নিয়ে তর্ক করব না।
বিগব্যঙ অবস্থার আগে কি ছিল, বিজ্ঞানীদের মধ্যে এ নিয়ে মতভেদ আছে। অবশ্য সাধারণ আপেক্ষিকতা এর আগের সময়ের ব্যাখ্যার জন্য মহাকর্ষীয় অদ্বৈত্য বিন্দু বা সিঙ্গুলারিটি নামক একটি শব্দের প্রস্তাব করেছে। বিগব্যঙ শব্দটি স্থুল অর্থে প্রাচীনতম একটি বিন্দুর অতি শক্তিশালী বিস্ফোরণকে বোঝায়, যার মাধ্যমে মহাবিশ্বের সৃষ্টি হয়েছিল। এখন সময়ের সাথে সাথে এর আয়তনের বৃদ্ধি ঘটছে। সুতরাং সময়কে যদি পেছনের দিকে বিপরীতভাবে গমন কল্পনা করা হয়, তাহলে মহাবিশ্বের আয়তন কমতে থাকবে। এবং সময়ের প্রথম অবস্থায় গিয়ে মহাবিশ্বের আয়তন আবার ওই বিন্দুতে গিয়ে মিলে যাবে। যেখানে বৃত্তের অবস্থান হবে শুন্যের কাছাকাছি, যা সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্ষুদ্র এবং এর চেয়ে ক্ষুদ্র হওয়া সম্ভব নয়। তবে, অবশ্যই সেটা একেবারে আক্ষরিক অর্থে শুন্য নয়; বরং শুন্যের কাছাকাছি অস্তিত্ব। কারণ অস্তিত্ব আছে এমন কোনো কিছুর আয়তন শুন্য হওয়া সম্ভব নয়। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে শুন্যের কাছাকাছি এই বিন্দুটা এসেছিল কোথা থেকে?
এর উত্তর কি হবে, স্বতঃস্ফূর্তভাবে? আমরা ধরে নিতেই পারি, যে প্রায় শুন্যের কাছাকাছি আদি বিন্দুটি আর ক্ষুদ্র হওয়া সম্ভব ছিল না। তাই এখান থেকেই সবকিছুর শুরু। এর আগে কিছু নেই। তাহলে আমরা কেন প্রশ্ন করি, যে স্রেষ্টার স্রষ্টা কে? কেন বিশ্বাস করতে পারি না, যে স্রষ্টার আগে কিছু থাকা সম্ভব নয়। স্রষ্টার ইচ্ছাতেই সবকিছুর শুরু কল্পনা করতে আমাদের অসুবিধা কোথায়?
আমরা ধোয়া দেখলেই আগুন কল্পনা করে নেই। তাহলে ইকোসিস্টেমের পেছনে পরিকল্পনার চিহৃ খুঁজতে অসুবিধা কোথায়? নক্ষত্র বা গ্রহ-উপগ্রহগুলো কক্ষচুত্য হচ্ছে না। এর পেছনে কক্ষচুত্য না হওয়ার ব্যাখ্যাই যথেষ্ট নয়। কক্ষচুত্য না হওয়ার প্রোগ্রামটা কেউ তৈরী করে দিয়েছে কিনা, তার ব্যাখ্যাও জানা দরকার। যে কোটি কোটি স্বতঃস্ফূর্ত ঘটনার মধ্য দিয়ে আমরা আজকের এই অবস্থানে এসেছি, তার মধ্যে একই হারে স্বতঃস্ফূর্ত ভয়ঙ্কর ঘটনা ঘটাও অস্বাভাবিক ছিল না। কে আমাদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য সেসব ভয়ঙ্কর ঘটনাগুলো ঘটা থেকে বিরত রাখছে? পৃথিবী এবং আমাদের অস্তিত্ব ধ্বংসের জন্য সূর্য জগতের এলোমেলো আচরণই তো যথেষ্ট।
বি:দ্র: সবকিছুর আসলে স্রষ্টা থাকে না। মানুষ তো স্রষ্টা নয়ই। ধারণটা যৌক্তিক নয়। মানুষ কেবল মানুষের ব্যবহার্য জিনিসের রুপগত পরিবর্তন সাধন করতে পারে।
সূত্র: বাংলা উইকিপিডিয়া, কোরআন শরীফ
(এই বিভাগে প্রকাশিত মতামতের জন্য কর্তৃপক্ষ দায়ী নহে)
- See more at: http://www.priyo.com/blog/2014/11/26/120569.html#sthash.sDHEsQ27.dpuf